
সিলেট প্রতিনিধি:
উড়ে এসে সিলেটে জুড়ে বসা বলেই নাম তার উড়াইক্কা সুমন, জাফলংয়ে এসে ঘরজামাই হয়ে বিয়ে করেছে বলে তাকে বলা হয় উঠরা সুমন, এলএলএম প্রতারনার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারণে নাম তার হায়হায় সুমন, কথা বলে নোয়াখালির ভাষায় তাই নাম তার নোয়াখাইল্লা সুমন, মোবাইল মেকারি করতো বলে নাম তার মেকার সুমন, ইয়াবা সেবনের কারণে তাকে বলা হয় ইয়াবা সুমন, চোরাচালান নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে বলে নাম তার বুঙ্গাড়ী সুমন এবং এসপির ভাগ্না পরিচয় দেয় বলে নাম তার ভাগ্না সুমন এবং পদস্থ ব্যক্তিদের সাথে ফটো তুলে প্রচার করে বলে নাম তার ফটকা সুমন।
সিলেটে দাপিয়ে বেড়ানো এত সব বিশেষেণের কে সেই সুমন, কি তার আসল পরিচয়। তার প্রকৃত নাম জাকির হোসেন সুমন। মূল বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। ঢাকার ইংলিশ রোডস্থ থিয়াংশী নামের একটি হায়হায় (এলএলএম) কোম্পানীর প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রথমে তার সিলেট আগমন। এলএলএম কোম্পানীর নামে হাতিয়ে নেয় অনেক টাকা।
আশ্রয় নেয় গোয়াইনঘাটের ভারত সীমান্তবর্তী জাফলং এলাকায়। আন্তর্জাতিক একটি কোম্পানীর পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে সেখানে ফাঁদ পাতে বিয়ের। জাফলং গুচ্ছগ্রাম মোহাম্মদপুর গ্রামের একটি মেয়ে বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে বাসবাস শুরু করে ওই এলাকায়। তার মামা শশুর গুচ্ছগ্রামের রজব আলীকে দিয়ে গড়ে তোলে জৈন্তা গোয়াইনঘাটে একটি চোরাচালানী (বুঙ্গাড়ী) সিন্ডিকেট।
সেই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে জাকির হোসেন সুমন। জৈন্তার সংগ্রাম বিজিবি’র লাইনম্যান কাজ দেয় মামা শশুর রজব আলী ও রজব আলীর সহযোগী সমছুকে। হয়ে ওঠে জৈন্তা গোয়াইনঘাটের চোরাচবারানের প্রধান নিয়ন্ত্রক।
মামা শশুর রজব আলী ছাড়াও সুমনের চোরাচালানী সিন্ডিকেটের অন্যরা হচ্ছে জৈন্তাপুরের সমছু মিয়া,লেট্রিন শহীদ,বেন্ডিস করিম,রুবেল আহমদ, রহিম উদিদ্দন, কবিরাজ ফারুক। চোরাচারানীদের কাছ থেকে উত্তোলিত লাইনের টাকা প্রত্যহ বিজিবি ক্যাম্পে পাঠায় মামাশশুর রজব আলীর মাধ্যমে।
তথ্য সংগ্রহের জন্য রজব আলীকে ফোন দিলে তিনি জৈন্তার সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পে রয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। জাকির হোসেন সুমন তার চোরাচালানী সিন্ডিকেটসহ অবৈধ কর্মকান্ড চাপা দিতে নিজেকে সিলেটের বর্তূমান পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের ভাগ্না পরিচয় দিয়ে থাকে। যদিও পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সিলেটে তার কোন ভাগ্না বা আত্মীয় নেই বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এসপির ভাগ্না পরিচয়ে জাকির হোসেন সুমন পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্ত ব্যক্তির সাথে গড়ে তুলে গভীর সখ্যতা। আর এ সখ্যতার বলে সে পার পেয়ে যায় সকল অপরাধ অপকর্মে। পুলিশ ও প্রশাসেন বিভিন্ন পদস্থ কর্তাব্যক্তির সাথে ফটো তুলে তা প্রচার করে ফেইসবুকসহ অনলাইন মিডিয়ায়। আর এর মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চোরাচালানী চাঁদাবাজিসহ জনগনের উপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে এই সুমন। দেখা গেছে সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর, জেলা ডিবি’র মিজানুর রহমান সরকার, গোয়াইনঘাটের ওসি তদন্ত ওমর ফারুক মোড়ল, সিলেট কোতোয়ালি থানার সদ্য বদলী হওয়া ওসি আবু ফরহাদ, কোতোয়ালির ওসি তদন্ত ইয়াসিন, এয়ারপোর্ট থানার ওসি খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির, ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান-এর সাথে ফটো তুলে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে সরকার দল ও প্রশানের অতি ঘনিষ্ট ও মায়ার মানুষ বওে নিজেকে পরিচয় দিয়ে ঢাকার রিজেন্ট সাহেদের মত ব্ল্যাকমেইল করে থাকে। জাকির হোসেন সুমন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসব নেতা ও কর্তা ব্যক্তির সাথে ছবি তুলে প্রচার করে তা নিজের হীনস্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে জাকির হোসেন সুমন নিজেকে সাংবাদিক ও এসপির ঘনিষ্ট আত্মীয় পরিচয়ে জাফলংয়ের কয়েকজন পাথর ও বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সপ্তাহে ও মাসে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকে।
গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করলেও জাকির হোসেন সুমন বর্তমানে সিলেট নগরের শাহী ঈদগাহে বাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে। সে সিলেট কোতায়ালি থানায় দায়ের করা নারীর উপর সহিয়সতা ও ছিনতাইয়ের একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি। যাহা (২১ সেপ্টেম্বর) কোতোয়ালী থানার মামলা নং-{৭৫(৯)২১}। পাশপাশি ২৪/০৭/২০২১ ইল তারিখে আদালতে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়ও এজহারভুক্ত প্রধান আসামী সে। যাহার মামলা নং- ১০৪/২১। এছাড়াও এর আগে সে গোয়াইনঘাটের এসিল্যান্ড-এর উপর হামলায় মামলায় আসামী ছিল। এতসব অপরাধ অপকর্মের হোতো হয়েও ধারছোঁয়ার বাইরে থাকা জাকির হোসেন সুমন ওরফে উড়াইক্কা সুমনের খুটির জোর কোথায় ? এটাই সচেতন সিলেটবাসীর প্রশ্ন।