৮ই মে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস

৮ই মে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বিভিন্ন আয়োজনে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা পর্যায় গুলোতেও নানা আয়োজনে এই দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
এবারে ‘মানবিক হও’ প্রতিপাদ্যে কুষ্টিয়া ইউনিটও র‍্যালি, আলোচনা সভার পাশাপাশি শিশুদের চিত্রাঙ্কন এবং রচনা প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে।

‘সেবাব্রতী’ এই মুলমন্ত্রে বিশ্বাস করা সরকারের সহযোগী এই সংস্থা সব সময় দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে সরকারের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে মানবতার সেবায় কাজ করেন। বিভিন্ন দুর্যোগের পাশাপাশি করোনা মহামরিতে রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রম ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে। খাদ্য ও অর্থসহযোগীতার পাশাপাশি বিন্যামুল্যে করোনা রোগীদের অক্সিজেন এবং এ্যাম্বুলেন্স সেবায় অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস এবং এর ইতিহাসঃ

বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস: যেহেতু জীন হেনরী ডুনান্ট রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি ৮ মে জন্মগ্রহণ করেন তাই ডুনান্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে।

জীন হেনরী ডুনান্ট: জীন হেনরী ডুনান্ট ১৮২৮ সালের ৮ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের রু ভারদেইনি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৬২ সালে নভেম্বর মাসে এ মেমোরি অব সলফেরিনো নামক একটি বই রচনা করেন। জীন হেনরী ডুনান্ট ১৯০১ সালে ডিসেম্বর মাসে ১ম নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ১৯১০ সালে ৩০ অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

১৮৫৯ সালের ২৪ জুন, ইতালির উত্তরাঞ্চলের পল্লী প্রান্তর সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহ ও মারাত্মক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে হতাহত হয় প্রায় ৪০,০০০ সৈন্য। আহত সৈন্যরা বিনা চিকিৎসায় যুদ্ধক্ষেত্রেই উন্মুক্ত প্রান্তরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। সেই সময় সুইজারল্যান্ডের এক যুবক জীন হেনরী ডুনান্ট ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে ফ্রান্সে তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তী এ মর্মান্তিক করুণ ও ভয়াবহ দৃশ্য দেখে তিনি খুবই ব্যথিত হন এবং আশে-পাশের গ্রামবাসীদের ডেকে এনে আহতদের সেবা করেন। তাঁরাই রেড ক্রসের প্রথম স্বেচ্ছাসেবক, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা।

এ মেমোরি অফ সলফেরিনা: ডুনান্ট এই যুদ্ধের ভয়াবহ বিভীষিকাময় স্মৃতি ও তার প্রতিকারের জন্য ১৮৬২ সালে এ মেমোরি অফ সলফেরিনো নামে একটি বই রচনা করে। এ বইয়ের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব বিবেকের কাছে এক মানবিক আবেদন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। বইটির মূল কথা ছিল “আমরা কি পারি না প্রতিটি দেশ এমন একটি সেবামূলক সংস্থা গঠন করতে, যারা শত্র মিত্র নির্বিশেষে আহতদের সেবা করবে”। সে সময়ে জেনেভার সমাজ সেবাসংগঠন পাবলিক ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি সর্বপ্রথম ডুনান্টের আবেদনে সাড়া দেয় এবং ডুনান্টের স্বপ্ন বাস্তাবয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়।

কমিটি অফ ফাইভ: ১৮৬৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি জীন হেনরী ডুনান্ট ৪ জন জেনেভাবাসীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন, যা কমিটি অফ ফাইভ নামে পরিচিত। এ কমিটির নাম পরিবর্তিত হয় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি বা আইসিআরসি (ICRC) হয়। ১৯৬৩ সালের ২৬ অক্টোবর প্রথমবারের মত এ কমিটি ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহবান করে। সম্মেলনে ডুনান্টের মহতী প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা ও গৃহীত হয় এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে রেড ক্রস জন্মলাভ করে।

কমিটি অব ফাইভের গঠন ছিল নিম্নরূপ:
প্রেসিডেন্ট- জেনারেল উইলিয়াম হেনরী দ্যুফর।
ভাইস প্রেসিডেন্ট- গুস্তাফ ময়নিয়র।
সেক্রেটারি- জীন হেনারী ডুনান্ট
সদস্য- ড. লইস আপ্পিয়া
সদস্য- ড. থিয়ডর মাউনোইর। এরা সকলেই ছিলেন সুইস নাগরিক।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি:
১৯৬৫ সালের অক্টোবরে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতিগুলো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি ৭টি।
১। মানবতা ।
২। পক্ষপাতহীনতা ।
৩। নিরপেক্ষত।
৪। স্বাধীনতা ।
৫। সেচ্ছামূলক সেব।
৬। একতা ।
৭। সার্বজনীনত।

রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রতীক:
১৮৬৩ সনের ২৬ অক্টোবর ১ম জেনেভা সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক জীন হেনরী ডুনান্ট ও তার দেশকে সম্মান এবং স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ফেডারেল কালারের বিপরীত রঙকে আন্দোলনের প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করে ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে সেনা মেডিকেল সার্ভিস ও মেডিকেল রিলিফ টিমকে পৃথকভাবে শনাক্ত করার জন্য সাদা জমিনে রেড ক্রস চিহ্ন বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
১৮৬৪: প্রথম জেনেভা কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকভাবে রেড ক্রসকে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল সার্ভিসের পৃথক চিহ্ন হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
১৮৭৬: রুশ-তুর্কি যুদ্ধের সময় অটোমান সম্রাজ্য রেড ক্রসের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্ট প্রতীক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। মিসর ও রেড ক্রিসেন্ট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯২৯ সালের কনভেনশনে এসব প্রতীক লিখিত ভাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *