বাঁশখালীতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ করায় হামলা- আহত ১২

বাঁশখালীতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ করায় হামলা- আহত ১২


মোঃআনোয়ার বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নের সেন্টার পুকুর নামক স্থানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিতব্য ২৬টি ঘরে দুর্নীতির অভিযোগ করায় অভিযোগকারীদের ওপর স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী বাহিনীর হামলায় ১২জন আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার( ৩ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং গত বুধবার রাত ৯টায় মিলে দুইদফা সংর্ঘষ হয়েছে। এই নিয়ে পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা চলছে। গুরুতর আহত আবু তালেব(৬০), নবী হোসেন(৪০), জাহাঙ্গীর আলম(৩৫), নেজাম উদ্দিন(৪০), জহির আহমদ(৪০), মিজানুর রহমান (৩৭) এবং মো. আলম (৩৫)সহ ৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাথে লাগোয়া সেন্টার পুকুর নামক স্থানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৬টি বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী নির্দেশে ওই ২৬টি বাড়ির অলিখিত ঠিকাদারি করছেন খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হলেও ওইসব কাজ তদারকিতে দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. ইউসুফ, ফজু আহমদ ও শমশু প্রকাশ পেটুক শমশু নামের তিন ব্যক্তিকে। শুরু থেকে ওইসব কাজে লবণাক্ত বালি, নি¤œমানের ইট, সিমেন্ট এবং লোহার রড ব্যবহারে জালিয়াতি করার অভিযোগ করে আসছিলো গ্রামবাসী। অভিযোগ পেয়ে, গত বুধবার রাত ৮টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী এবং উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে আওয়ামীলীগ নেতা নবী হোসেন, খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, এসব পিলারে ৬ ইঞ্চির পরিবর্তে ৯ ইঞ্চি দূরত্বে লোহার খাঁচা ( হাড়–) ব্যবহার করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক পিলার ভেংগে সত্যতা প্রমাণ পান। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ফিরে গেলে বুধবার রাতেই অভিযোগকারী নবী হোসেন ও মো. খোরশেদের ওপর হামলা চালায় চেয়ারম্যানের নিযুক্ত মো. ইউসুফ, ফজু আহমদ ও শমশু প্রকাশ পেটুক শমশু। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চেয়ারম্যান বাহিনীর লোকজন প্রকাশ্যে কিরিচ, লোহার রড ও কনক্রীট নিয়ে মহড়া দিতে থাকলে গত বুধবার রাতে হামলায় আহত নবী হোসেন ও মো. খোরশেদের লোকজন প্রতিবাদ করতে সেন্টার পুকুর এলাকায় ছুটে আসে। এতে দুই পক্ষে সংর্ঘষ লেগে যায়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সৃষ্ট এই সংঘর্ষে দুই পক্ষে অন্ততঃ ১২ জন আহত হয়েছে। ওৎপেতে থাকা চেয়ারম্যান বাহিনীর সশস্ত্র হামলায় সবচেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে ৭জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মো. ইউসুফ, ফজু ও শমশু আমার বাহিনী নয়। তাদের সাথে নবী হোসেন ও মো. খোরশেদের আগে থেকে বিরোধ ছিলো। ওই বিরোধের রেশ ধরে হামলার ঘটনা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোন দুর্নীতির বিষয় নয়। দুর্নীতি না হলে ইউএনও কেন ঘরের পিলার ভেংগে লোহার রড উঠিয়ে নিলেন ? ওই প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী কোন সদুত্তর দেননি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে পিলার ভেংগে লোহার রড উঠিয়ে নিয়েছি। হামলার বিষয়টি আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে নয়, পরস্পরের রাজনৈতিক দ্বন্ধ। কাউকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি করতে দেয়া হবে না।
বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মো. শাহ আলম বলেন, সকালে হামলার পর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে পরিস্থিতি শান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *