ভোলায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে ধান কেটে ভূমিহীনের জমি দখলের পায়তারা

আশিকুর রহমান শান্ত,ভোলা প্রতিনিধি।

ভোলায় এক চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৩০ বছরের ভোগ দখলে থাকা সরকারের দেয়া বন্দোবস্থিয় জমির উপর জাল কাগজপত্র তৈরী করে ধান কেটে দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করারও হুমকি দিচ্ছে তারা।

জানা যায়, ৩০ বছর পূর্বে নদী সিকস্তি মোঃ হারুন ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর পাতাভেদুরিয়া মৌজায় অনাবাদি খাস জমিতে একটি দোচালা ঘর তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে বসতি শুরু করে।

তারা ভূমিহীন হওয়ায় স্থানীয় আবু তাহের গাজী তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান জবররদ্দিন এর মাধ্যমে সরকারের কাছে ভূমি বন্দোবস্তের জন্য একটি আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সিও রেভিনিউ ও এসডিও ১৯৭৩/৭৪ সালে মোঃ হারুনকে ও স্থানীয় ছিডু মাঝির নামে চর ভেদুরিয়া মৌজার ১.৫০ (দেড় একর) করে ২জনকে ৩.০০ (তিন একর) ভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়।

যার মধ্যে মোঃ হরুনের বন্দোবস্তিয় সেটেলমেন্ট কেস নং ১৬২৬ ভোঃ/৮২-৮৩, এস,এ দাগ নং ৫০৯০/৫০৮৮, এস,এ খতিয়ান নং ৭৩২ বিএস ৭১৪৪ এবং ছিডু মাঝির সেটেলমেন্ট কেস নং ২৫১৮ ভোঃ/১৯৭৩-৭৪, দাগ নং ৫০৯২, খতিয়ান নং ৭২৬ বিএস ৭১৪৫। উভয় সাকিন চর ভেদুরিয়া। যাহা ৮/১২ নং বালামভূক্ত আছে। উক্ত ভূমিহীনরা সরকার কর্তৃক বন্দোবস্ত পেয়ে খতিয়ান ও কবুলিয়ত সম্পাদন হয়ে ২০১২ সাল থেকে খাজনা সেলামি পরিশোধ করে জমি ভোগদখল করে আসছে।

কিন্তু ওই এলাকার একটি সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুদের চোখ পড়ে ওই জমির উপর। চর ভেদুরিয়ার ভূমি দস্যু নামে খ্যাত আঃ সহিদ পন্ডিত ও শাজাহান বেপারী ওই ভূমিহীন পরিবারটিকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে নানা ফন্দিফিকির শুরু করে।

দির্ঘ ৩০ বছর ভোগ দখলে থাকা সরকারের দেয়া বন্দোবস্থিয় জমির উপর ভোলা বাপ্তা ইউনিয়নে স্থায়ী বসবাসকারী আঃ হক ও আঃ সহিদ পন্ডিতের দুই স্ত্রী মৃত বিবি ছকিনা ও খাদিজা বেগমের নামে আরও একটি জাল বন্দোবস্তের কাগজপত্র তৈরী করে ওই জমি তাদের দাবী করে। এ জমির বিরোধ নিয়ে ২০২১ সাল থেকে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আদালতে চলমান মামলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব ক্ষমতাবলে ওই এলাকার মেম্বার ও চৌকিদারকে ধান কাটার নির্দেশ দেয়। উক্ত ধান মেম্বার ও চৌকিদারের জিম্মায় রাখার কথা থাকলেও প্রকাশ্যে ৩ একর জমির ধান কেটে তা বিক্রি করে চেয়ারম্যান মোস্তোফা কামাল টাকা নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় চৌকিদার ভুট্টু বলেন, ধান মেম্বারের জিম্মায় রাখার কথা ছিল কিন্তু মেম্বার ধান বিক্রি করে চেয়ারম্যানকে দিয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার হোসেনের সাথে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও সে ফোন রিসিভ করেনি।

ঘটনা সম্পর্কে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, জমির মালিকানা দাবীদার আঃ সহিদ পন্ডিতের আবেদনের প্রেক্ষিতে জমির বিরোধীয় পক্ষকে বসতে বলেছিলাম কিন্তু হারুন গংরা আসেনি। তাই বিরোধ নিষ্পত্তিতে জমির ধান কেটে টাকা আমার কাছে রেখেছি। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমানের কথা জানালে এবং আদালত কর্তৃক ধান কাটার কোনো আদেশ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার কথা আমি যানিনা। আদালতের কোনো আদেশ পাইনি। তবে ধান কাটার টাকা আমার কাছে রয়েছে, যে ব্যক্তিরা জমি পাবে তাদেরকে টাকা দিয়ে দিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *