
ষ্টাফ রিপোর্টার।
ভোলা সদরের আলীনগরে ঝুমুর নামের প্রবাস ফেরত এক নারীর অত্যাচারে সাধারন মানুষ ও যুবসমাজ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কারন-অকারনে নিরীহ মানুষের উপর হামলা ও মিথ্যে মামলা দিয়ে এই নারী ব্যাক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হতে সবসময় নানা প্রকার ফন্দিফিকির আটেন। বিভিন্ন এনজিও এবং গ্রাম্য সমিতিগুলো হতে ছলাকলা করে মোটাদাগের লোন নিয়ে তা আর ফেরত না দেয়ার বিস্তর অভিযোগ এ নারীর বিরুদ্ধে। তাছাড়া বিভিন্ন যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের ব্ল্যাক মেইলিং করে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে সর্বোশ্ব লুটে নেয়ার মত চাঞ্চল্যকর বহু ঘটনাও ওই এলাকায় আলোড়ন তুলেছে। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানকালে এলাকার শ্রেনীপেশার মানুষ এ নারীর বিরুদ্ধে প্রতারনা,সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্যকলাপের এমন বহু ঘটনার ফিরিস্তি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,আলীনগর ইউনিয়নের সাচিয়া নামক গ্রামের বাসিন্দা মৃত-আব্দুর রব মিয়ার কণ্যা ঝুমুর বেগমের পরিবার অতি দরিদ্র হওয়ায় ছোটবেলায় মেয়েটিকে স্থানীয় অপর বাসিন্দা মিলন ওরফে হেজু লালন-পালনের জন্য নিয়ে যান। একপর্যায়ে ওই পরিবারে বড় হয়ে ঝুুমুর মিলন মিয়ার সন্তান হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন।
মিলন ওরফে হেজু মিয়ার ভাষ্যমতে,পালক মেয়ে ঝুমুরকে বিয়ে দেয়ার পর ঝুমুর নিজেই সাবলম্বী হতে বিদেশে (উমান) পাড়ি জমান। স্থানীয়দের মতে,কয়েকবছর বিদেশে বেশ ভালোই আয়-রোজগার করে দেশে ফিরে আসেন ঝুমুর। কিন্তু দেশে আসার পর মতলববাজ এই নারী গ্রামের যুবসমাজ ও সহজ-সরল সাধারন মানুষকে টার্গেট করেন। শুরু হয় তার ধান্ধানাজীর ভিন্ন মিশন।
এলাকার মহিউদ্দিন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এই নারী আমার পরিবারের ভিতর বিবাদ বাধিয়ে আমার একমাত্র রোজগারের মাধ্যম দোকানটিতে হামলা,ভাংচুর ও লুটতরাজ চালিয়েছেন। অপর যুবক চুন্নু মিয়া জানান,তার উপর হামলা করে তার টাকা পয়সা লুন্ঠনসহ মিথ্যে-সাজানো মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করছেন, ভয়ঙ্কর নারী ঝুমুর বেগম। ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমিরুন নেছা গণমাধ্যমকে জানান, সামান্য ঘটনার ধোয়া তুলে ঝুমুর তার সঙ্গীয় কিছু বখাটে ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে তার পরিবারের উপর হামলা চালায়। বিগত ৩০ নভেম্বর/২০২৩ইং বেলা ১১টায় এই হামলা চালিয়ে উক্ত ঝুমুর ভিক্টিম আমিরুন নেছার ডান কান ছিড়ে রক্তাক্ত করে তার গহনা ছিনিয় নেন। কানের ওই ক্ষতস্থানে ৩টি সেলাই দেয়া হয়েছে। অপর কানের অলঙ্কারও ছিনিয়ে নিয়েছেন-দূর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর আহত আমিরনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমাণ্যরা সমাধান করতে না পারায় ভিক্টিম আমিরুন ওরফে আমিরুন নেছা বাদী হয়ে ঝুমুরসহ ৫ ব্যাক্তির বিরুদ্ধে গত ২০ ডিসেম্বর ভোলার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল বিচারিক হাকিমের আদালতে একটি মামলা রুজু করেন। (যার নাম্বার-৬০৫/২৩ইং) স্থানীয় “পদক্ষেপ” নামক এনজিও’র মাঠকর্মী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ঝুমুর বেগম তার সংস্থা থেকে লোন নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছেননা। কিস্তি তুলতে গেলে ঝুমুর তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন বলে জানান তিনি। শুধু তা-ই নয়, ঝুমুর বেগমের এসব বেলাল্যাপনা ও অশোভন কর্মলীলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তার আপন “মা”বেগী বেগমও নিজের মেয়েকে আসামী করে ভোলার সিনিয়র জুডিশিয়াল বিচারিক হাকিমের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যা এখনো চলমান। ঝুমুরের এধরনের অসংখ্য কর্মকান্ডে আলী নগরবাসী এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। গ্রামবাসী ভয়ঙ্কর এ নারী ঝুমুরের ছোবল থেকে নিস্তার পেতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত ঝুমুর বেগমের সাথে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এব্যাপারে কথা হয়,আলীনগর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মিয়ার সাথে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন,ঝুমুর বেগমের বিরুদ্ধে আনীত বহু অভিযোগের শালিশী করেছি,এখনো করছি। তার সাথে অন্যদের মামলা-হামলা ও বিবাদসমুহ নিস্পত্তি করে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান এ জনপ্রতিনিধি। বর্তমানে আলেচিত এ নারী ঝুমুর বেগমের ভয়ে আলীনগরের ছিফলী গ্রামের বাসিন্দারা এখন চরম আতঙ্ক,উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা’র মধ্যে রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।