ব্যবসায়ী নিলুমন্ডলকে দুইদফা হাতুরী-রড দিয়ে পিটিয়ে জখম


বোরহানউদ্দিনে সংখ্যালঘু নির্যাতক কাউন্সিলর সোহাগের ভয়ঙ্কর যতো আমলনামা !!

স্টাফ রিপোর্টার


ভোলার বোরহানউদ্দিনের সংখ্যালঘুদের আতঙ্ক উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পৌর কাউন্সিলর ইবনে মাসুদ সোহাগ ফের বেপরোয়া হয়ে উঠৈছে। ওইজনপদের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্টীমরোলার চালালেও কাউন্সিলর সোহাগের যেনো কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। সন্ত্রাসলীলা আর অন্যায় প্রশ্নে সোহাগ সর্বদাই যেনো ডেমকেয়ার। চোরাচালান,মাদক কারবার,দখলসন্ত্রাস,টেন্ডারবজী,খাদ্যে ভেজাল ব্যবসা এমনকি জঘন্যতম কর্মকান্ডে সর্বেসর্বা সোহাগের শাসন আর শোষনের ভয়ঙ্করলীলায় অতিষ্ঠ মানুষের কান্না যেনো শুনছেনা কেউ। অন্যায়-অত্যাচার শোষন,নিপীড়ন আর জনতার উপর জুলুমবাজীর শীর্ষশিখরে পৌছে দুর্ধর্ষ সোহাগ এখন নিজেকে সন্ত্রাসজগতের মুকুটহীন অধিপতি ভাবছেন। তার ভয়ানক নির্মমতার সর্বশেষ সংখ্যায় যোগ হয়েছেন-বোরহানউদ্দিনের পক্ষিয়া ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ীর যোগেশ ডাক্তারের পুত্র নিলু মন্ডল। এ বাহিনীর অত্যাচার সইতে না পেরে সোশ্যাল মিডিয়ায়সোহাগের অপকর্মের একটি পোষ্ট দেয়ার জের ধরে তার উপর দুইদফা হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাউন্সিলর সোহাগের নেতৃত্বে তার পোষা গুন্ডাবাহিনী হাতুরী,লাঠি আর রড দিয়ে নিলুমন্ডলকে দুইদফা পিটিয়ে জখম করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের হামলায় নিলুমন্ডলের সারা থেতলে যায়। তিনি এখন হাটতে পারছেনন। কথা বলতে গেলে ব্যাথায় চিৎকার দিচ্ছেন। গত শুক্রবার (২সেপ্টেম্বর) বর্বোরচিত এ হামলায় গুরুতর আহত নিলু’কে জেলাসদর ভোলা হাপাতালে ভর্তিকরা হয়। ভিক্টিম নিলুমন্ডল’র মতে,ওইদিন সকাল ১১টায প্রথমবার হামলা করা হয় থানা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে এবং একইদিন বেলা সাড়ে ১২টায় হামলা চালানো হয় সেখানকার সাবেক পৌর মেয়র মিলন মিয়ার বাড়ীর সামনের বালুমাঠে। এসময় ক্যাডাররা নিলুমন্ডলকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালান বলে আহত নিলু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। নিলুমন্ডল জানান,ওইদিন সোহাগের নেতৃত্ব তার বাহিনীর ক্যাডার-ইকবাল,আবু কালাম’সহ ৫/৬ জনের দুর্বৃত্তদল তার উপর এ হামলা চালায়। একপর্যায়ে নিজেকে রক্ষায় থানায় প্রবেশ করেও নিলুমন্ডল পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাননি। নিলুমন্ডল জানান,সোহাগ বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে গুরুত্বর আহত হলে পথচারীরা তাকে জেলাসদর ভোলার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান।
তথ্যমতে,রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে সোহাগও নিজের জার্সি বদল করে নতুন গডফাদারের সান্নিধ্যে থেকে সংখ্যালঘুদের উপর আধিপত্য,দাপট আর নিপীড়ননের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। রাজনৈতিকদলের সাংসদের আশীর্বাদপুষ্ট থাকার কারনে পাহাড়সম অপরাধ আর অপকর্ম করেও কাউন্সিলর সোহাগ যেনো অধরাই থেকে যাচ্ছেন।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানকালে বোরহানউদ্দিন উপজেলার হিন্দুপল্লীর নানা পেশার ভুক্তভোগীরা সোহাগ ও তার বাহিনীর নির্মমতার এসব ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তারা জানান,২০০১ সালে যখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিলো তখন থেকেই এই সোহাগের উত্থান ঘটে। বর্তমানে তিনি ভোল-পাল্টে স্থানীয় আ’লীগ দ্লীয় সাংসদ আলী আজম মুকুল’র ছত্রছায়ায় থেকে নিজের সন্ত্রাসকর্ম অব্যহত রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এসবের সাথে এ সাংসদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সোহাগের এসব অপকর্ম আর আশীর্বাদপুষ্টে রেখে তাকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে,এধরনের অভিযোগের বিষয়ে নিজের কোনোপ্রকার সায় নেই বলে দাবী করেছেন,সাংসদ আলী আজম মুকুল। জানা গেছে,তৎকালীনসময়ে সেখানকার বিএনপিদলীয় সাংসদ হাফিজ ইব্রাহীমের আশীর্বাদ নিয়ে সন্ত্রাসী সোহাগ পুরো জনপদের সংখ্যালঘুদের উপর ত্রাসের রাজত্ত্ব চালাতো। সেইসময়ে সোহাগের নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশী নারকীয়তা ঘটেছে হিন্দু অধ্যুসিত এলাকা পক্ষিয়ায়। তার স্বশস্ত্র বাহিনী স্থানীয় পক্ষিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুপরিবারের উপর লুটপাট চালাতো বলে অভিযোগের অন্ত:নেই। সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি-জমা,ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রন-ই ছিলো সোহাগের কব্জায়। বিএনপি জমানায় সোহাগ নিজের অন্যায়-অবিচারের কাজ সম্প্রসারন করতে ম্যাসেল ক্যাডারদের সমন্বয়ে একটি “হিটার বাহিনী” গড়ে তুলেন বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তার এহেন কাজে প্রশাসনিকভাবে কোনো এ্যাকশান না হওয়ায় কালক্রমে সোহাগ বাহিনী যেনো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। কোনোপ্রকার বাধা-বিপত্তি না থাকায় বর্তমানে এরা আরো সু-সংগঠিত একটি পিচাশ বাহিনীতে আবির্ভূত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিএনপি জোট-জমানায় এরা পক্ষিয়া এলাকার হিন্দুসম্প্রদায়ের নেতা সর্বোজন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার যোগেশ চন্দ্র মন্ডলের বাড়ীতে হামলা,গনলুট ও হিন্দু নারীদের সম্ভ্রমহানীরমত বর্ববরতম পৈচাশিক ঘটনা ঘটায়। ওইসময় ক্যাডাররা সেইবাড়ীর পূজো-প্রার্থনালয়সহ পুরো বসত বাড়ীতে লুন্ঠনশেষে তচনচ করে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। একই গ্রামের অপর বাসিন্দা শৈলেশ চন্দ্র মন্ডল জানান,এরা এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, এদের হাত থেকে হিন্দু নারীরা-ও নিস্তার পায়নি। ওই এলাকার যোগেশ ডাক্তারের স্ত্রী বনোরানী মন্ডল বলেন,সোহাগের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পরিবারের সকলে জেলা সদর ভোলায এসে আত্নীয়দের বাড়ীতে আশ্রয়ে থাকতাম। একই গ্রামের বাসিন্দা- শৈলেশ মন্ডল,নিরঞ্জন,মালেক সর্দার,নবু মিজি ও রাজীব মিজিও সোহাগ বাহিনীর ক্ষমতার দাপট আর লুটপাটের চুলচেরা কাহিনী গনমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন। তারা বলেন- এভাবে ওই গ্রামের আরো বহু হিন্দুবাড়িতে হামলা ও লুটের মচ্ছব চালিয়ে উল্লাশ করতো সোহাগ বাহিনী। বোরহাউদ্দিন পৌর ৫ নং ওয়ার্ডে সোহাগের বসবাস থাকার সুবাদে সেখানকার হিন্দু পরিবারগুলোকেও জিম্মি করে ফেলেন এই সোহাগ। তার ভয়ে পৌরএলাকার কোনো হিন্দু পরিবার নির্যাতিত হলেও কোনোপ্রকার টু-শব্দ পর্যন্ত করতে সাহস করছেনা। বিএনপি ক্ষমতাকালে তখনকার সরকারদলীয় সাংসদ হাফিজ
ইব্রাহিম’র সেল্টার ও তার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিম্বা নিজ দলের পক্ষ থেকেও তার বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার ব্যবস্থা নিতে কেউ সাহস করেনি। ফলে অন্যায় ও লুটের রাজত্বে সোহাগ যেনো বোরহানউদ্দিনে অপকর্মের একক আর অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুকুটহীন সম্রাট হয়ে উঠেন। আইনের কাছেও তিনি থেকে যান অধরা। কালক্রমে সোহাগের আধিপত্যের সীমানা আরো বৃদ্ধি পায়। হিন্দু পরিবারের উপর চলতে থাকে নারকীয় তান্ডলীলা। সেখানে গড়ে তোলা হয় সোহাগ বাহিনীর টর্চারসেল। সেখানে বিভিন্ন মানুষকে কারন-অকারনে ধরে এনে নির্যাতন চালানো হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন। সোহাগের আদেশ-নিষেধ না মানলে তাকে মিথ্যে মামলা কষিয়ে হয়রানী ও নাজেহাল করা হয় বলে জানান,সেখানকার ভূক্তভোগী মানুষ। নামপ্রকাশ না করার শর্তে পৌর এলাকার হিন্দু বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান,সোহাগের স্বার্থের কোনোপ্রকার হেরফের হলেই এ বাহিনী তার গড়ে তোলা ওই টর্চারসেলে এনে সাধারন মানুষকে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে থাকেন। সোহাগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বহু হিন্দুপরিবার অনেক আগেই এলাকা ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে সংখালঘু অনেকের ভিটাবাড়ী দখল করে নিয়েছেন সোহাগ। লুন্ঠন আর অপকর্মের আয়ে সোহাগ খুব অল্পদিনেই বিশাল বিত্ত্ব-বৈভবের মালিক বনে যান। অবৈধভাবে অর্জিত টাকার গরম আর গডফাদারের নেক-নজরে থাকার একপর্যায়ে সোহাগ পৌর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ বাগিয়ে নেন। ওই ওয়ার্ডে নির্বাচনে অন্য কেউ প্রার্থী হলে তাকে এর চড়া মাসূল গুনতে হয়। বিগত পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার অপরাধে সোহাগ-শিমূল বাকলাই নামে এক ব্যাক্তিকে টর্চারসেলে আটক রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই কাউন্সিলর প্রার্থী শিমুল বাকলাই এ প্রতিবেদককে জানান, ভয়ঙ্কর সোহাগ তাকে বদ্ধঘরে আটক রাখায় তিনি নিজের ভোটটিও পর্যন্ত দিতে পারেননি। ফলে অধিক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রার্থী হয়ে ভেটে নামলে সোহাগের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা তাকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে দেননি। স্থানীয়রা জানান,কাউন্সির হওয়ার পর থেকে সোহাগ যেনো আরো ভয়ঙ্কররুপে আবির্ভূত হন। বিএনপি জোট ক্ষমতা হারালেও সোহাগের ক্ষমতাবৃদ্ধির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সোহাগ ও তার বাহিনীর নির্যাতনে সর্বোস্ব হারানো-ডাক্তার যোগেশ চন্দ্র মন্ডল গনমাধ্যমকে জানান,উক্ত সোহাগ বোরহানউদ্দিন শহরে আমাদের দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-আশির্বাদ জুয়েলার্স ও রায়মোহন মেডিকেল হল থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে দেন। তিনি বলেন, সোহাগের নৈরাজ্যের শিকার হয়ে আইনের সাহায্য না পেয়ে আমি ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করেছি। কেন্দ্রীয় হিন্দুপরিষদের মহাজোটের পক্ষ থেকেও বিএনপি সরকারের কাছে আবেদন করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলাম কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। আ’লীগ ক্ষমতায় আাসার পরও সোহাগের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে এলাকার সাংসদ আলী আজম মুকুলের চাচা ভোলা-১আসনের সাংসদ তোফায়েল আহমেদের কাছে লিখিত আবেদন করি। পরবর্তিতে নিরুপায় হয়ে সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও একটি লিখিত আবেদন করে সোহাগের কবল থেকে রক্ষার আকুতি জানাই। তবুও সন্ত্রাসী সোহাগের বিরুদ্ধে কেনোযে, কিছু হচ্ছেনা তা আমার বোধগম্য নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সোহাগের সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় ভোলা-২ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আলী আজম মুকুল সোহাগের বড়ভাই আজাদকে নিজের এপিএস পদে নিয়োগ দিয়েছেন। আর একারনেই সেখানে নির্ভয়ে সন্ত্রাসকর্ম চালাতে সোহাগ কোনোপ্রকার কুন্ঠাবোধ করেননা। জানা গেছে,উক্ত আজাদ বোরহাউদ্দিন উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ছোটভাই সোহাগ সকল অপকর্মের সেল্টার পেয়ে থাকেন,বড়ভাই সাংসদের এপিএস আজাদের কাছ থেকে। এদিকে এসব বিষয়ে কথা হয় অভিযুক্ত কাউন্সিলর ইবনে মাসুদ সোহাগের সাথে। তার মুঠোফোনে (যার নম্বর- ০১৭২৬-১৬৪২৪৪) গণমাধ্যমকে বলেন,হিন্দুদের উপর নির্যাতন,সন্ত্রাসীকর্ম আর অপকর্মের অভিযোগটি একেবারেই অবান্তর। তিনি সাংসদ কিম্বা এপিএস ভাইয়ের সেল্টারে কিছুই করছেননা। সংখ্যালঘু নিলুমন্ডল’র উপর কোনোপ্রকার হামলা চালানো হয়নি বলেও দাবী করেন তিনি।থানার সামনে নিলুমন্ডলের উপর এমন বর্বোরচিত নিপীড়নের ঘটনা সম্পর্কে জানতে কথা হয় বোরহানউদ্দিন থানার তৎসময়ের ডিউটি অফিসার মেহদী হাসানের সাথে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন,থানার সামনে এমন ঘটনার কথা তিনি শুনেননি,কোনো পুলিশ সদস্যগণও তা দেখেননি। তাই খোঁজ না নিয়ে আগাম কিছুই বলা যাচ্ছেনা। বর্তমানে সোহাগ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ডা.যোগেশচন্দ্র মন্ডল পরিবারসহ সেখানকার ভুক্তভোগীরা চরম আতঙ্ক’উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। অতি দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে না গেলে তাদের সকলকে ভয়াবহভাবে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন সোহাগ। সোমবার
(৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের কাছে এমন শঙ্কার কথা জানান,আহত ভিক্টিম নিলুমন্ডল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *