
মোঃ ফরিদ উদ্দিন, আজকের দেশবাণী।
মানবতার উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে পারে বাংলাদেশ। ভাল নেই পাকিস্তানের করাচিতে থাকা প্রায় ২০ লাখ বাঙ্গালি সেখানে তাদের থাকতে হচ্ছে অদৃশ্য অনীহায়।
অতিবাহিত হচ্ছে মানবেতর জীবন।অপরিসীম আনুগত্যের বিনিময়েও তারা নাগরিকের মর্যাদা পাচ্ছেন না।জাতীয় পরিচয় পত্র মিলেনা,ফলে উচ্চ শিক্ষা এবং সরকারি চাকরি ও তাদের কপালে জোটেনা।
জমি,বাড়ী কিনতে পারেন না,থাকতে হয় বাড়ী ভাড়া করে।ধর্মের কারনে যারা পাকিস্তানকে আপন ভেবে গিয়েছিলেন।এতোদিন পর এসে ভূল ভাঙ্গছে তাদের।
শুধু ধর্ম তাদের বন্ধন সৃষ্টি করতে পারেনি।ভিনদেশী তকমা আর বাঙালি হওয়ায় পাকিস্তানে মীরজাফর হিসেবে চিহ্নিত পাকিস্তানের করাচিতে বাস করা প্রায় বিশ লাখ বাঙালি।
পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচি,দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ন শহর এটি।এক সমিক্ষায় দাবি করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর হচ্ছে করাচি
প্রতিনিয়ত মারামারি,খুনাখুনি যেন নিত্য-নৈমিত্বিক ব্যাপার এই শহরের।আর এখানেই বাসকরে প্রায় বিশ লাখ বাংলা ভাষী মানুষ।
যারা বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলেন,বোয়াল মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে জর্দা-পান মুখে দেন তাদের কলোনীর রাস্তায় হাটলে শুনতে পাওয়া যায় বাংলাদেশের পপ তারকা মমতাজের হিট গান।
পাকিস্তানের করাচির বাঙ্গালিদের বাড়ীতে,বাড়ীতে আজও চলে সাবিনা- ইয়াসমিন,রুনা-লায়লা,মমতাজ ও এন্ড্রোকিশোরের সঙ্গে কিশোর কুমার আশাবোসলের বাংলা গান।তাই করাচিকে মিনি বাংলাদেশ বলে থাকেন পাকিস্তানের মানুষ।এসব কলোনীতে বাঙালিদের বসবাস।
তাদের আত্নীয়তা,বিয়ে-স্বাদী সারতে হয় নিজেদের মধ্যে।বাইরে বেরোনের কোন উপায় নেই তাদের।অন্য কোন সম্প্রদায়ের সঙ্গেও তাদের মেলামেশা হয়না।
করাচিতে বাঙালিরা প্রথম আসেন বৃটিশ আমলে।মাছ ধরার কাজে বাঙালির পারদর্শিতার জন্য বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে নিয়ে যান করাচির গুপ্তভাষী ব্যাবসায়ীরা।
পরবর্তীকালে ভারত স্বাধীন হবার পর তৎকালীন পূর্বপাকিস্থান থেকে প্রচুর সংখ্যক বাঙ্গালী করাচিতে আসেন।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বেশ কিছু বাঙালি দেশে ফিরে আসেন।কিন্তু বেশির ভাগ বাঙালি রয়ে যান করাচিতে।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে জীবিকার সন্ধানে প্রচুর বাঙ্গালী বাংলাদেশের নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে করাচিতে এসেছিলেন।কারন ঐ সময় বাংলাদেশী টাকার তুলনায় পাকিস্তানি টাকার দাম ছিল প্রায় দ্বিগুণ।আয়-রোজগারও ছিল ভাল।
১৯৯৫ সালে পাকিস্তানে বাংলা ভাষীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় পঁচিশ লাখে।সুতরাং জীবিকার তাগিদে,অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে করাচিতে শুরু হয়ে গিয়েছিল জায়গা দখলের লড়াই।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পাল্টে দেয় বাঙালির ভাগ্য লিখন।
পূর্বপাকিস্তানের বাঙালিরা গঠন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ।কপাল পুড়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সেইসব বাঙালির।সেই সাথে তারা পশ্চিম পাকিস্তানে মীরজাফর নামে পরিচিত।পাকিস্তানি সমাজের সর্বস্তরে ঘৃনা আর বৈষম্য ও নির্যাতনের স্বীকার।
কোনভাবে পাকিস্তানকে আপন ভেবে সেইসব মানুষ গুলি,বংশ পরমপরায় পাকিস্তানে থেকেও আজও পাকিস্তানের জাতীয় পরিচয়পত্র মিলেনা বাঙালি বাংলা ভাষীদের।নাগরিকত্ব দূরে থাক ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বেশ টাকা ঘুষ দিয়ে কাজ করতে হয় তাদের।
তাদের কাছ থেকে জানা যায়,জাতীয় পরিচয়পত্র মিলেনা বলে পাকিস্তানের বাঙালিরা উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরি পাননা।জমি কিংবা বাড়ী কিনতে পারেন না বাড়ী ভাড়া করে থাকতে হয় তাদের।
বহুকাল আগে দেশ ছেড়েছেন তবুও তৃতীয় প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারেননি।আজও করাচিতে বাঙালিদের বাস করতে হয় গিঞ্জি বস্তিতে চারদিকে নোংরা পানি আবর্জনার মধ্যে।যে বস্তিতেগুলোতে দিনের মধ্যে বিশ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা।পানিও জল আসে দিনে মাত্র একবার।
উচ্চশিক্ষা না থাকার ফলে তৃতীয় প্রজন্মের বাঙালিরা ছোটখাট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।পাকিস্তানের বাঙালিদের জীবন যাত্রার মান একশ বছরেও উন্নত না হওয়ার পুরো কারন হলো বাঙ্গালিরা পাকিস্তানের নাগরিক নন।
যেহেতু নাগরিক নন,তাই তাদের ভোটাধিকার নেই।আর যেহেতু ভোটাধিকার নেই সুতরাং পাকিস্তানের রাজনীতিকদের কাছে বাঙালিদের কোন দাম নেই।মানসিক বৈষম্যে অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কিছু বাঙালি পরিবার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
প্রতিদিনই বাঙালিরা পাকিস্তানের ভিসা অফিসে ভিড় করছে বাংলাদেশের ভিসা পাওয়ার আশায়।তারা হয়তো বুঝেছেন এক গাছের ছাল কখনও অন্য গাছে লাগানো যায়না।তারা বুঝেছে খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি আমার দেশের মাটি।কিন্তু আপসোস বুঝতে অনেক দেরী হয়ে গেল তাদের। করাচিতে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের মুক্তির স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারের কি পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আপনি মনে করে ?? আপনার মূল্যবান মন্তব্যের ক্ষনগননায়