স্টাফ রিপোর্টারঃ
ভোলা শহরের পৌর ৫নং ওয়ার্ড'র হোমিও কলেজ সড়কে অবস্থিত সাবেক সেনা সদস্য নাসির উদ্দিন লিটনের বসতঘর ও পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের জের ধরে ভিক্টিমসহ দুইজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন হামলাকারীরা।
গত ১৮ এপ্রিল/২০২৩ইং বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল বিচারিক হাকিমের আদালতে সেনা পরিবারের উপর হামলাকারী বলে অভিযুক্ত একই এলাকার মৃত-আয়ুব আলী মিয়ার পুত্র শমশের আলী বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বাদীর সাথে পুর্ব বিরোধে জড়ানো এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মহসিন নামের অপর এক ব্যাক্তিকেও আসামী করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায,বরিশালের সাইবার ট্রাব্যুনালে পিটিশনটি
(যার নম্বর-৩৫/২৩) দায়ের হলে উক্ত আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো: গোলাম ফারুক বাদীর অভিযোগটির তদন্ত করতে ভোলা সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলাটির বাদী শমশের গং কর্তৃক হামলার শিকার নাসিরউদ্দিন ও স্থানীয় একাধিক তথ্যসূত্রে জানা গেছে,জমিজমা বিরোধের জের ধরে এই মামলার বাদী শমশের আলী ও তার ভাই লিয়াকত আলীসহ একদল দূর্বৃত্ত সাবেক সেনা সদস্য'র বসতবাড়ীতে হামলা ও নারীদের পিটিয়ে আহত করে এবং তাদের শরীরের স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ২০২৩ইং সকাল ৮ ঘটিকায় প্রকাশ্য এ হামলার ঘটনার পর ভিক্টিম সাবেক সেনা সদস্য নাসির উদ্দিন ভোলা সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে আব্দুল খালেক নামের অভিযুক্ত এক ব্যাক্তিকে আটক করেন। দু'গ্রুপের দ্বন্দ্বের বিষয়টির সুরাহাকল্পে থানা কর্তৃপক্ষ ঈদূল ফিতরের পর কাগজপত্র নিয়ে বসাবসির কথাও ছিলো। কিন্তু সে-টি'র তোয়াক্কা না করে হামলাকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে গেলে ভিক্টিম নাসির উদ্দিন সন্ত্রাসীদের হামলা,লুন্ঠন,নারীদের উপর নিপীড়নের আদ্যোপান্ত উল্লেখ করে গত ১৪ এপ্রিল তার ব্যাক্তিগত অফিসে একটি সংবাদ সম্মেলন'র আয়োজন করেন। সেখানে লিখিত বক্তব্যে তিনি ভয়ঙ্কর লিয়াকত বাহিনী দ্বারা দীর্ঘ ২১ বছর যাবত নির্যাতনের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। ভিক্টিম নাসিরউদ্দিন বলেন,সংবাদসম্মেলনের অভিযোগগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সেগুলো অন্যান্যদের মতো আমিও শেয়ার করি। তাছাড়া বিভিন্ন সময় শমশের লিয়াকত গংদের অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে সেসব ঘটনাগুলোও সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দিয়ে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সহ্যোগিতা চাইতাম,এখনো চাচ্ছি। নাসিরউদ্দিন জানান,এসব প্রতিপক্ষ'রা তার ক্রয়কৃত ৬ শতাংশ জমি'র মধ্যে আড়াইশতাংশ জোড়পূর্বক দখল করে রেখেছেন। ফলে ওই জমির সঠিক হিসেব পেতে তিনি ভোলার অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী বিচারিক হাকিমের আদালতে বিগত,১৮ এপ্রিল/২৩ইং তারিখে ওইসকল দূর্বৃত্তদের কর্মকান্ড উল্লেখ করে ১৪৪ ও ১৪৫ দন্ডবিধির অভিযোগ এনে একটি মামলা (যার নম্বর-২৬৭) দায়ের করেন। উক্ত মামলা দায়ের'র পর আদালতের নির্দেশক্রমে থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিবাদীদের প্রতি নোটিশ দিলেও তারা যেনো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। মূলত:এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে নিজেদের আড়াল করতে ও আমার উপর প্রতিশোধ নিতেই আমাকেসহ দুইজনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি দিয়েছেন বলে জানান,সাবেক সেনা সদস্য নাসিরউদ্দিন।
এদিকে সাইবার আদালতে মামলা দায়ের'র পর থেকেই শমশের-লিয়াকতসহ তাদের বাহিনীর লোকেরা প্রতিনিয়ত ওই পরিবারের লোকজনকে হত্যা-গুম,বসতঘরে আগুন দেয়া ও ভয়াবহ নাশকতা ঘটানোর হুমকি দিয়ে আসছে বলে জানান,ভিক্টিম নাসিরউদ্দিন। তিনি বলেন,যারা আমার বসতবাড়ী ও স্ত্রী-সন্তান এবং বাসায় কর্মরত শ্রমিকের উপর নির্মমভাবে হামলা চালালো উল্টো তারাই আমাদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিচ্ছে,যা সত্যি-ই অবাক করার মতো। তিনি আরো বলেন,বর্বরোচিত এসব হামলা-নিপীড়নের ভিডিওচিত্র আমার কাছে সংরক্ষণ রয়েছে।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে গেলে সেখানকার শ্রেনী-পেশার মানুষ জানান, লিয়াকত-শমশের বাহিনীর জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে এলাকার বাসিন্দারা একেবারেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা জানান,অন্যের জমি জোড়পূর্বক দখল করে তারা সেখানে বসবাস করে এলাকায় অশান্তির মাত্রা দিনদিন বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের নিজস্ব তিল পরিমান জমি না থাকলেও লিয়াকত-শমশের যেনো এখন হোমিও কলেজ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে একটি বিষফোঁড়া'র নাম।
এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ এদের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত লিয়াকত-শমশের আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে- তারা জমি দখল ও সন্ত্রাসকর্মসহ নানা অনৈতিক কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। সন্ত্রাসী হামলা ও নির্যাতনের শিকার সাবেক সেনা সদস্য নাসিরউদ্দিন'র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক "ফিরোজ আল মামুন" গণমাধ্যম'কে জানান,অভিযোগটি যথাযথভাবে তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন পেশ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কারো কোনোপ্রকার প্রভাবকে পাত্তা দেয়ার সুযোগ নেই।