ভোলার মেঘনায় কোস্টগার্ড-নৌ-পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনবাহিনীর ডাকাতির মহোৎসব

ভোলার মেঘনায় কোস্টগার্ড-নৌ-পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনবাহিনীর ডাকাতির মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার

ভোলার মেঘনা নদীতে জলদস্যুদের বিরামহীন তাণ্ডবলীলায় জেলে সম্প্রদায় আর বিভিন্ন জলযানগুলো রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কোস্টগার্ড আর নৌ-পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনবাহিনীর অপরাধকর্মের বিশাল সাম্রাজ্য এখন মেঘনার শ্রমজীবী মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,একসময়ে কোস্টগার্ডের মনোনীত সোর্স হিসেবে মেঘনা নদী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় কাজ করতো পূর্ব ইলিশার বাসিন্দা সবুজ,ইউসুফ এবং ভূট্রু নামের তিন ব্যাক্তি। এরা কখনো নৌ-পুলিশকেও অপরাধের তথ্য সরবরাহ করতো। এভাবে এলাকায় বিশেষভাবে কোস্টগার্ড”র সোর্স হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করার পর থেকেই নিজেরা বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি টের পেয়ে কোস্টগার্ড তাদেরকে আটক করে শাস্তির আওতায় এনে তাদের সোর্সের পদ থেকে অব্যহতি দেন। মেঘনা পাড়ের শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান,কোস্টগার্ড কর্তৃক শাস্তির সম্মূখীন হওয়ার পর এই তিন বাহিনী বেশ কিছুদিন চুপচাপ থেকে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

পূর্ব ইলিশা জংশন বাজার এলাকায় সরেজমিন এদের বিরুদ্ধে সেখানকার জেলেরা অভিয়োগ করেন, সবুজ ও ইউসুফের নেতৃত্বে সেখানে পৃথক তিনটি বাহিনী গড়ে উঠেছে। এসকল বাহিনী পুরো মেঘনা নদীর পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছে। সূত্রমতে,এই তিন বাহিনী প্রতিনিয়তই দিন-রাত মেঘনা নদীর প্রত্যন্তঞ্চলের মাছধরা জেলদের দাবিয়ে বেড়ায়। এরা নিজেরা সরাসরি কোস্টগার্ড পরিচয় দিয়ে নদীর জেলেদের জাল,মাছ এমনকি কখনো নৌকা-ট্রলার পর্যন্ত ছিনিয়ে নিচ্ছে। ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ইলিশায় শুধু জলদস্যুবৃত্তি করেই খ্যান্ত নয়,সে পুরো ফেরীঘাটসহ মেঘনার মাছঘাটগুলোতেও লুটের রাজত্ব চালাচ্ছে। সেখানকার মাছ ব্যবসায়ী জামাল,বাশার,সেলিম,কালিমুল্লাহসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি গণমাধ্যমকে জানান,ইলিশা ফেরীঘাট দিয়ে মাদক চোরাকারবার,চোরাই পন্যসামগ্রী আমদানী-রপ্তানীর মূল হোতাই হচ্ছে ভূট্রু। সম্প্রতি ফেরীযোগে লক্ষ্ণীপুরে পাচারকালে সোয়াবিন ও পামওয়েলের একটি বড় চালান ট্রাকসহ কোষ্টগার্ডের হাতে আটক হয় কয়েক মাস আগে। ওই চালানটি ভূট্রুর নেতৃত্বে পাচার হচ্ছিল বলে স্থানীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ভোলায় মাদক কারবারের একটি বড় অংশ ভূট্রু তত্বাবধানে হয়ে থাকে বলে অপর একটি সূত্র গণমাধ্যমের কাছে তথ্য দিয়েছে।

অন্যদিকে সন্ত্রাসী সবুজ ও তার বাহিনী কোস্টগার্ড পরিচয়ে মেঘনার আনাচে-কানাচে লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে বলে অভিযোগের অন্তঃ নেই। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয়ে মেঘনা নদীতে চলমান মালবাহী কার্গো জাহাজ,যাত্রীবাহী ট্রলার ও ভলগেটগুলোতে এই বাহিনী হরহামেশাই চাঁদাবাজী, ডাকাতি এবং গণহারে লুন্ঠনের মচ্ছবে মেতে উঠে। তথ্যসূত্রটি আরও জানায়,একসময়কার সামান্য ভ্যানযোগে তরকারী বিক্রেতা এবং বর্তমানে অটোরিকশার মেকানিক ও চাল সবুজ এখন কোটি টাকার মালিক হয়ে নদীপাড়ে অপরাধ জগতের নেতার ভূমিকায় সন্ত্রাসকর্মের নাটাই ঘুরাচ্ছেন।

ওদিকে ইউসুফ মাঝি তার বাহিনী দ্বারা মেঘনা নদীর জেলেদের জাল,মাছ যেনো খুবলে খাচ্ছে। কখনো কেস্টগার্ড,কখনো ফাঁড়ি পুলিশ আবার কখনো নৌ-পুলিশ পরিচয়ে ইউসুফ বাহিনী মেঘনা নদীর পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছে। অভিযোগ রয়েছে যে, সবুজ অটোরিকশা চালক ও মেকানিকের সাইনবোর্ড সরিয়ে নদীতে মাছ ঝাঁকজমার থাকলে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সোর্স অথবা আবার মাঝি পরিচয় দিয়ে জেলেদের কে জিম্বি করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায় সবুজের পিছনে রয়েছে কিছু অসাধু বাহিনীর সদস্যদের যোগসাজসে এই তিন বাহিনী দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনার পলিযুক্ত নোনা পানি যেন জেলে আর মাঝিমাল্লাদের রক্তের পলিতে লাল করে দিচ্ছে।

এব্যাপারে ইলিশা ইউপি’র বিশিস্ট সমাজ সেবক সোহরাওয়ার্দী মাষ্টার জানান,এই তিন বাহিনী মেঘনা ও তৎসংলগ্ন এলাকাসমূহ এখন সন্ত্রাসের রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করলে সাধারন মানুষ এবং জেলে সম্প্রদায়কে আগামীদিনগুলোতে চরম মূল্য দিতে হবে। অনুসন্ধান চলাকালীন নৌ পুলিশ-ইনচার্জ মোহাম্মদ আকতার হোসেন বলেন, নদীতে কোন ব্যক্তি নৌ পুলিশ পরিচয় দিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব এবং এবং যাদের নাম বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিব। এবং জেলদের জান-মাল রক্ষায় তার নৌ পুলিশ নিরলস কাজ করছেন বলে দাবী করেছেন।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত ভূট্রু, ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করলে এধরনের অপরাধকর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবী করেন তারা। এ ব্যাপারে অটোরিকশা মেকানি জামালের ছেলে সবুজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি এখন অটোরিকশা মেকানিজ আমি এখন নদীতে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের কোন পরিচয় দেয় না।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায় সবুজ নৌ পুলিশ কোস্টগার্ডের পরিচয় দিয়ে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর জেলেদেরকে জিম্মি করে ভয় ভিত্তি দেখিয়ে টাকা আদায় করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *